বাঘে ছুঁলে আঠার ঘা, পুলিশে ছুঁলে
সহস্র ঘা; আর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ ছুঁলে জন্ম-জন্মান্তরের ঘা। পৃথিবীর যেসব দেশ একদা
বৃটেন শাসন করেছিল সেসব দেশ অদ্যাবধি সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও গোত্রীয় বিষে জর্জরিত
হয়ে সংঘাত ও সংঘর্ষ সৃষ্টি করছে। ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের Divide and Role Policy বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের কলোনীগুলোতে মিথ্যা ইতিহাস, ভেজাল
ইতিহাস রচনা ও পাঠ্য করেছে, তাদের ধর্মগ্রন্থকে বিকৃত করেছে, গোত্রে-গোত্রে, ধর্মে-ধর্মে
বিভেদের কাল্পনিক ইতিহাস রচনা করে, ধর্মীয় ফেরকা সৃষ্টি করে উক্ত কলোনীর জনমানসকে বহুধা
বিভক্ত করে সংঘর্ষাবস্থা সৃষ্টি করেছে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষকে ২ ভাগ করে চলে যাওয়ার
সময় ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী তাদের উত্তরসূরি হিসেবে রেখে যায় নেহেরু নেতৃত্বাধীন ব্রাহ্মণ্যবাদী
ভারতীয় শাসকগোষ্ঠীকে। ফলে ’৪৭ পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী সমগ্র উপমহাদেশের
জনগণকে একইভাবে ‘বিভক্ত কর- শাসন কর’ পদ্ধতির আওতায় এনে সকল কিছু গ্রাস করার চেষ্টা
করছে এবং অব্যাহতভাবে বিভিন্ন জাতির ইতিহাস বিকৃত করে জাতিসত্তার মৌলিক বিষয়সমূহের
উপর আঘাত হানছে।
ভারত-আওয়ামী লীগের সম্পর্কের গভীরতা
অনসুন্ধান করতে গেলেও দেখা যাবে, কিভাবে ভারত পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জনগণকে বহুধা
বিভক্ত করে সংঘাত- সংঘর্ষে লিপ্ত করছে, যাতে উভয় দেশ অস্তিত্বহীনতায় নিমজ্জিত হয় এবং
দুর্বল হয়ে আগ্রাসী ভারতের খাদ্যে পরিণত হয়। এই বইতে এমন চাপাপড়া তথ্যগুলো উপস্থাপন
করা হয়েছে, যেগুলো সঠিকভাবে প্রচারিত হলে ভারতের নোংরা খেলার মুখোশ উন্মোচিত হবে এবং
বাংলাদেশ সংঘাত-সংঘর্ষ পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে এসে সঠিক ইতিহাসের আলোকে নিজেকে এগিয়ে
নিয়ে যেতে পারবে।
ভারত-আওয়ামী লীগ সম্পর্ক
আওয়ামী লীগের সম্পর্কের গভীরতা কারণ
অনুধাবন করতে হলে আওয়ামী লীগের জন্ম, জন্মদাতা এবং জন্মদানের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে পর্যালোচনা
করতে হবে। এ বিষয়ে স্যার উইনস্টন চার্চিলের অমর উক্তি (“The Longer you can look back, the farther you can look ahead” অর্থাৎ ‘যত দূরবর্তী অতীত ইতিহাস
তুমি জানবে- তত দূরতম ভবিষ্যত তুমি দেখবে’) প্রতি দৃষ্টি নিবন্ধ করতে হবে। ৭১১ খ্রিস্টাব্দে
মুহাম্মদ বিন কাসিমের সিন্ধু বিজয় থেকে শুরু করে ১৭৫৭ সালের পলাশী বিপর্যয়, টিপু সুলতানের
পরাজয়, দিল্লী পতন, ১৮৫৮ সালের সিপাহী বিপ্লবে মুসলমানদের চূড়ান্ত পতন এবং ১৮৭০ পরবর্তী
মুসলমানদের উত্থান প্রক্রিয়া, ১৯৪৭ সালের পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা, ১৯৭১ সালের পাকিস্তান
ভাঙা এবং '৭১ পরবর্তী পুনরায় মুসলিম শাসনের পতনের ধারাবাহিকতা, কারণ ও উপাদান সমূহ
বিশ্লেষণ করলে আওয়ামী লীগের জন্মদাতা ও পালন কর্তাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্য দিবালোকের মত
সুস্পষ্ট হবে।
৭১১ সাল থেকে ১৭৫৭ সাল পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্ন
মুসলিম শাসনের সময় ভারত বর্ষের জনগণ একজাতির ন্যায় বসবাস করেছিল। কেননা মুসলিম শাসনামলে
ধর্মের কারণে, বর্ণের কারণে, সম্প্রদায়ের কারণে কখনো প্রতিপক্ষ অত্যাচারিত হয়নি। উক্ত
আমলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গারও কোনো নজির নেই। এতদসত্ত্বেও ভারতের বর্ণহিন্দুরা মনের দিক
থেকে কখনো মুসলিম শাসন মেনে নেয়নি। মুসলমানদের উদারতার সুযোগ নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়
প্রথমে শক্তি সঞ্চয় করে এবং পরবর্তীতে ভারতবর্ষ থেকে মুসলিম শাসন উৎখাত করতে ইউরোপীয়দেরকে
এদেশের শাসন ক্ষমতায় বসায়। দীর্ঘ ১৯০ বছর এই ইঙ্গ-হিন্দু চক্র মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষ
থেকে নিশ্চিহ্ন করার যাবতীয় প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। এসময়ে মুসলমানদেরকে ভারতবর্ষের জমির
মালিকানা থেকে, সরকারি চাকরি থেকে, সেনাবাহিনী থেকে উচ্ছেদ করে ভূমিদাসে পরিণত করে।
এতদসত্ত্বেও কিছু দূরদর্শী মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ১৯৪৭ সালে বিশাল ভারতবর্ষের
একটি ক্ষুদ্র অংশে নিজেদের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়। এই ক্ষুদ্র ভূখণ্ডেও যাতে
মুসলমানরা ক্ষমতাসীন থাকতে না পারে সে লক্ষ্যে ইঙ্গ-হিন্দু শক্তি ৪৭ পরবর্তী সময়ে পুনরায়
চক্রান্ত শুরু করে। এই চক্রান্তের শুরুতেই পাকিস্তানের ইসলামী ঐক্যকে দুর্বল ও ধ্বংস
করার লক্ষ্যে প্রথমে যুবলীগ তৎপর আওয়ামী মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা
করা হয়। তাদের সাথে যোগ করা হয় সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট কমিউনিস্ট পার্টি সমূহ এবং অখণ্ড
ভারত প্রতিষ্ঠায় সংকল্পবদ্ধ পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেসকে। এভাবেই প্রথমে পাকিস্তানের
মুসলমানদেরকে দ্বিধাবিভক্ত করে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা হয়। অতপর বাংলাদেশী মুসলমানদেরকে
দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য বাঙালি/বাংলাদেশী, স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ, ধর্মভিত্তিক-ধর্মনিরপেক্ষ
শ্রেণীর সৃষ্টি করা হয়। ইতোপূর্বে অর্থাৎ ১৭৫৭-১৯৪৭ সময়কালে ভারতের উগ্রহিন্দুরা মুসলমানদের
উপর যে অত্যাচার- নির্যাতন চালাত বর্তমান বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী
ভারতপন্থীরা ধর্মভিত্তিক ও ধর্মীয় ভাবাপন্ন মুসলমানদের উপর একই প্রকার অত্যাচার- নির্যাতন
ও হত্যাযজ্ঞ পরিচালনা করছে। হিন্দু শাসনে ভারতের মুসলমানরা যেরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের
শিকার- বাংলার মুসলমানরাও আওয়ামী শাসনে একইরূপ অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। প্রশ্ন
উঠতে পারে আওয়ামী লীগ কি মুসলমানদের দল নয়? তার উত্তর হচ্ছে এই যে, যে দল সংবিধান থেকে
‘আল্লাহর উপর আস্থা ও বিশ্বাস’ মুছে দিতে পারে সে দল গায়ের জোরে বা আরবী নামের কারণে
মুসলমান থাকে কিভাবে? আল্লাহর উপর আস্থা বা ঈমান না থাকলে কেউ মুসলমান হয় না, তার অকাট্য
প্রমাণ হলো- আরবী নামধারী আবু জেহেল, আবু লাহাব ও আবু তালেব মুসলমান ছিল না। তদুপরি
যে দলটি মুসলমানদের চেয়ে অমুসলমানদেরকে বেশি আপন মনে করে, যে দলের শীর্ষ পরিবারটি মুসলমানদেরকে
বাদ দিয়ে ইহুদী-খ্রিস্টান-হিন্দুদের সাথে আত্মীয়তা করে, যে দলের সেক্রেটারী জেনারেল
নামের পূর্বে সৈয়দ রেখে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়- ‘আমি হিন্দু ও না মুসলমান ও না’ এবং যে
দলটি মন্দির-গীর্জা-প্যাগোডাকে নিরাপদ মনে করে এবং কেবলমাত্র মসজিদকে ঘিরে রাখে র্যাব-পুলিশ
ও গোয়েন্দা দিয়ে। সে দলটি ৬০ কোন স্তরের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করে তা বোকা লোকটি
ও বুঝতে পারে। এ দলটির সাথে অখণ্ড ভারতে বিশ্বাসী এবং মুসলিম শাসন উৎখাতে প্রয়াসী,
বর্ণহিন্দুদের জন্মগত সম্পর্কের ব্যাপারে অসংখ্য তথ্য প্রমাণ রয়েছে। তন্মধ্যে পাঠকদের
জ্ঞাতার্থে প্রদত্ত কয়েকটি তথ্য নিম্নরূপ-
১. ২০১২ সালের নভেম্বরে বেগম খালেদা
জিয়ার ভারত সফরকে ব্যর্থ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য
প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হওয়ার পর ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এমতাবস্থায় প্রধানমন্ত্রীকে
আশ্বস্থ করার জন্য দিল্লী থেকে ২য়বার বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়-' আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের
জন্মগত সম্পর্ক, এর পরেই অন্যদের প্রসঙ্গ'। (সূত্র: দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন, তাং-০৩-১১-১২ইং)
২. ২০০৭ সালের এপ্রিলে রায়বেরিলির
এক জনসভায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেছেন, ‘আমার পরিবারই পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশের
জন্ম দিয়েছে।’ (সূত্র : The India Doctrine, M.B.I Mushi, page-III)
৩. ৩০ নভেম্বর ১৯৭০ সালে জনসভায় ভারতের
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘ভারত কখনো পাকিস্তানের অস্তিত্বকে মেনে
নেবে না।’ (সূত্র: ঐ পৃ-১১২)
৪. পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর শেখ মজিবুর
রহমান বিরোধী রাজনীতিতে একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার জ্যোতি
সেন গুপ্তের সান্নিধ্যে আসেন, যিনি মনোরঞ্জন ধরসহ কতিপয় কংগ্রেস নেতার সঙ্গে মুজিবের
পরিচয় করিয়ে দেন। মুজিব তাদের সাথে মিলে পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় কংগ্রেসের লক্ষ্য
হাসিলে কাজ করার ব্যাপারে একমত হন।
(সূত্র: জ্যোতি সেন গুপ্ত, হিস্ট্রী
অব ফ্রীডম মুভমেন্ট অব বাংলাদেশ, ১৯৪৭-৭৩: সাম ইনভলভমেন্ট)
৫. ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারির পর সলিমুল্লাহ
মুসলিম হল থেকে বিপুল পরিমাণ ধ্বংসাত্মক প্রচারপত্র উদ্ধার করা হয়। নারায়ণগঞ্জের মিছিলে
জয়হিন্দ এবং যুক্তবাংলা চাই স্লোগান দেয়া হয়। নবগঠিত আওয়ামী লীগের নেতা (এমএলএ) যিনি
হিন্দু মাড়োয়ারী ব্যবসায়ীর সাথে পাট ব্যবসায়ে সম্পৃক্ত ছিলেন তাঁর (ওসমান আলীর) বাসগৃহ
থেকে ধ্বংসাত্মক লিফলেট উদ্ধার করা হয় এবং একই স্থান থেকে ভারতীয় হিন্দু যুবকদের গ্রেফতার
করা হয়। একই রূপ ভারতীয় হিন্দু যুবক গ্রেফতার হয় চট্টগ্রাম, রাজশাহী এবং আরো কিছু স্থানে।
(সূত্র: ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস, বি আল হেলাল, পৃঃ ৪৪৯-৫০)
৬. ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠনের মূল
কাজটি সম্পাদন করে কমিউনিস্ট পার্টি। প্রকাশ্য রাজনীতিতে কার্যতঃ নিষিদ্ধ এই পার্টি
যুক্তফ্রন্ট গঠনে প্রধান ভূমিকা পালন করে। বামধারার ছাত্র ইউনিয়ন, গণতন্ত্রী দল ও আওয়ামী
লীগের অভ্যন্তরে কর্মরত বামরাই এতে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তৎকালে হিন্দুস্থানে কমিউনিস্টদের
উপর দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকলে ও দিল্লী পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্টদের পৃষ্ঠপোষকতা দান
করত শুধুমাত্র পাকিস্তানকে ধ্বংস করার জন্য। কমিউনিস্ট নেতৃত্বের মূল কাঠামোয় হিন্দু
নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত থাকার কারণে ভারতীয় সাহায্য তাদের জন্য অবারিত ছিল। (সূত্র: মোহাম্মদ
হান্নান, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস, পৃ-২৫)
৭. শেরেবাংলা একে ফজলুল হক যুক্তফ্রন্ট
গঠনের বিরোধী ছিলেন। ছাত্ররা এক বিরাট বিক্ষোভ মিছিল সংগঠিত করে তাঁর বাসভবন ঘেরাও
করে রাখে। শেষ পর্যন্ত ছাত্রদের চাপে রাজি হলে তাঁকে ছাত্ররা কাঁধে নিয়ে উল্লাস করতে
করতে ফিরে আসে। (প্রাগুক্ত পৃঃ ২৫)
দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তি ভাষা আন্দোলনের
সূত্রপাত করলেও পরবর্তীতে এর নিয়ন্ত্রণ এসে যায় কমিউনিস্টদের হাতে। ’৫২ সালের পর তারা
রাজনীতি ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠে। প্রথমতঃ তারা মুসলিম জনমানসকে
ইসলামী সংস্কৃতি থেকে তথাকথিত বাঙালি (হিন্দু) সংস্কৃতি অভিমুখে নিয়ে যায় স্মৃতিস্তম্ভ,
শহীদ মিনার স্থাপন করে এবং হিন্দুয়ানী কায়দায় বিভিন্ন দিবস পালন করে। ২য় পর্যায়ে মুসলিম
ঐক্যকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য গঠন করে যুক্তফ্রন্ট। এভাবে তারা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার
আদর্শিক চেতনা থেকে জনগণকে বিচ্ছিন্ন করে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে কাজে লাগায়।
৮. স্বাধীন হিন্দুরাষ্ট্র তৈরির চেষ্টা
আজকের নয়, পঞ্চাশের দশকেই হয়েছিল এর ব্লু প্রিন্ট। ‘বঙ্গভূমি ও বঙ্গসেনা’ পুস্তিকায়
ডা. কালিদাস বৈদ্য নিজেই স্বীকার করেছেন যে, ১৯৫২ সালে তারা তিন জন যুবক কলকাতা থেকে
তৎকালীন পূর্ব-পাকিস্তানে যান এবং ‘সংখ্যালঘুদের মুক্তির জন্য ব্যাপক কর্মতৎপরতা চালান।’
গোপনে স্বাধীনতা ও তার সঙ্গে স্বতন্ত্র বাসভূমির কথাও প্রচার করেন। ঐ তিন যুবক হলো-
কালিদাস বৈদ্য, চিত্তররঞ্জন ছুতার ও নীরদ মজুমদার। ... কালিদাস বৈদ্য ও চিত্ত ছুতার
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এবং বাংলাদেশে বহুকাল ভারতের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছেন।...
মুজিব সরকারের উপর প্রভাব খাটানোর জন্য চিত্ত সুতারকে ভারত সরকার চিরকাল ব্যবহার করেছে।
এখনো ভারত সরকারের তরফে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন চিত্তবাবু। (সূত্র: একশ’
বছরের রাজনীতি: আবুল আসাদ)
৯. পাকিস্তানের জন্মের প্রায় শুরু
থেকে ভারতের ষ্টেটম্যান পত্রিকার ঢাকা অফিসে দায়িত্বপালনকারী ভারতীয় সাংবাদিক জ্যোতিসেন
গুপ্ত স্বীকার করেছেন যে, শেখ মুজিবর রহমান সহ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের বহু মহলের
সাথে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার যোগাযোগ ছিল। (সূত্র: বাংলাদেশ মারাত্মক অপপ্রচারণা ও
ভারতীয় আধিপত্যবাদের শিকার, এমটি হোসেন, পৃ-৯৮)
১০. শেখ মুজিবের ২য় মৃত্যুবার্ষিকী
স্মরণে ১৯৭৭ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় আযোজিত এক সভায় বঙ্গভূমি আন্দোলনের সূচনা করা হয়।
সেই সমাবেশে ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর আশ্রিতা
শেখ হাসিনা ওয়াজেদ ও উপস্থিত ছিলেন। (M. T.
Hossain, ‘Bangabhumi The Weekly Friday, লন্ডন, সেপ্টেম্বর ১. ১৯৮৯ ইং)
১১. পূর্ব পাকিস্তানী রাষ্ট্রবিরোধী
ব্যক্তিদের সঙ্গে হিন্দুস্থানী যোগসাজসের প্রত্যক্ষ পরিচয় পাওয়া গেল ১৯৬৭তে যখন আগরতলা
ষড়যন্ত্র উদঘাটিত হল। কয়েকজন সাক্ষ্য দিল যে, শেখ মুজিবর রহমান এই ষড়যন্ত্রের সাথে
জড়িত ছিলেন। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর থেকে যখন দেশের অবশিষ্ট অংশ থেকে পূর্ব পাকিস্তানকে
পৃথক করার উদ্দেশ্যে একটি বিপ্লবী সংস্থা গঠিত হয়েছিল।... পরিকল্পনার মূল বিষয় ছিল
কমান্ডো হামলায় পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক ইউনিটসমূহের অস্ত্রাগারসমূহ দখল করে সেগুলোকে
অচল করে দেয়া। ভারত এ কাজে বিদ্রোহীদেরকে অস্ত্র সরবরাহ করবে। (সূত্র: বাংলাদেশের স্বাধীনতা,
যুদ্ধের আড়ালে যুদ্ধ, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, পৃ-১৩৩)
১২. ১৯৬২-৬৩ সালে আগরতলায় ভারতীয় আইবি
ফরেন ডেক্সের ফরেন অপারেটিভদের সঙ্গে মুজিব অংশের একটি বৈঠক হয়। (প্রাগুক্ত পৃ-৩৭)
১৩. ’৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধে
দলমত নির্বিশেষে সবাই সেদিন এক কাতারে সামিল হয়েছিল পাকিস্তানের পক্ষে। তবে একটি রাজনৈতিক
দলের ভূমিকা ছিল রহস্যময়। এ দলটি ভারতকে ধিক্কার দিতে একবারও মুখ খোলেনি। সমসাময়িক
পত্র-পত্রিকা সাময়িকীতে এর প্রমাণ মিলবে। সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটা আমাদের সবাইকে হতবাক
করে দিয়েছিল তা হলো তৎকালীন গভর্নর মোনেম খাঁ যুদ্ধকালীন ঘটনা বলতে গিয়ে বৈঠকে বলেছেন,
যুদ্ধ চলাকালে পূর্বপাকিস্তান যখন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন তখন শেখ মুজিব মোনেম
খানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন- তিনি যদি এই সুযোগে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন
তবে তাঁর দল সর্বোতভাবে তাঁকে সমর্থন দেবে। আর এটা শুধু নৈতিক বা আনুষ্ঠানিক সমর্থনই
হবে না, হবে সর্বাত্মক সমর্থন। যুদ্ধাবস্থায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে এই ভেবে জনাব
খান বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। পরে অবশ্য তিনি বিষয়টি পিন্ডিকে জানিয়েছিলেন। (সূত্র: স্মৃতির
পাতা থেকে, পিএ নাজির পৃঃ ২১৪-২১৫)
১৪. ’৭০-এর নির্বাচনী জনসভায় মুজিব
যেসব কথা বলেছিলেন, ঘটনা প্রবাহ সেভাবে এগোচ্ছিল না। ১৯৭০ সালে এলএফও ঘোষণার পর মুজিবকে
তার ইনার কেবিনেটের সসদ্যদের উদ্দেশ্যে স্পষ্ট বলতে শোনা গেছে, আমার আসল লক্ষ্য বাংলাদেশ
প্রতিষ্ঠা করা। নির্বাচনের পর আমি এলএফও ছিঁড়ে ফেলব। কে তখন আমাকে চ্যালেঞ্জ করবে?
এ ব্যাপারে বাইরের সূত্র থেকে সাহায্য আসবে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি- সম্ভবত ভারত থেকে।
(সূত্র: The last days of United Pakistan, G.W.
Chowdury, অনুবাদ: ইফতেখার
আমিন, পৃঃ ৮৯)
১৫. ১৯৭১ সালের ৩১ মার্চ Indian Institute of defence studies-এর পরিচালক এক সিম্পোজিয়ামে বলেন, ভারতকে আজ এই সত্য
অনুধাবন করতে হবে যে, পাকিস্তান ভেঙে গেলে আমাদের স্বার্থ উদ্ধার হবে। এ সুযোগ আর কখনো
নাও আসতে পারে। তাতে আরো বলা হয়- বাংলাদেশের এই সঙ্কট তার এক নম্বর শত্রু পাকিস্তানকে
বিনাশ করার জন্য শতাব্দীর সুযোগ এনে দিয়েছে। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৬. ২৭ মার্চ ১৯৭১ সালে ভারতের তৎকালীন
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাজ্য সভায় বলেন, অনেক কারণে এ বিষয়ে (পাকিস্তান ভাঙার
ব্যাপারে) আমরা আগ্রহী। প্রথমত একজন সদস্য যেমন বলেছেন, শ্রী মুজিবুর রহমান আমাদের
দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন পূরণের পক্ষে। ... প্রতিবেশী বড় একটি দেশের সরকার প্রধান
বলেছেন, 'যেহেতু বিদ্রোহী নেতা ভারতের স্বপ্ন পূরণের পক্ষে দাঁড়িয়েছেন, সেহেতু ভারত
পার্শবর্তী একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আগ্রহী হতে বাধ্য। (প্রাগুক্ত-পৃ-১৭০)
১৭. কংগ্রেস ও ভারত সরকার আন্তরিকভাবে
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা মেনে নেয়নি এবং এর প্রতিষ্ঠার পরও এর অবসান ঘটিয়ে অখণ্ড ভারত রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য প্রকাশ্যভাবে বহুবার ঘোষণা করেছে এবং এর জন্য প্রচেষ্টা অব্যাহত
রেখেছে। ১৯৪৯ সাল থেকেই ভারত সরকার পাকিস্তান ভেঙে বাংলাদেশ গঠন করার জন্য বাংলাদেশ
সেল গঠন করেছিল। দায়িত্বে ছিলেন ড. ত্রিগুনা সেন। (দেখুন, বেলাল মোহাম্মদের স্বাধীন
বাংলা বেতার কেন্দ্র)
১৮. ১৯৪৯ সালের প্রথমদিকে পাকিস্তানের
প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খানের ঢাকায় আগমন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে (বর্তমান
মেডিকেল কলেজের সম্মুখস্থ খেলার মাঠ) বক্তৃতা দেয়ার কথা। এ উপলক্ষে ড. মাহমুদ হোসেনের
সভাপতিত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারের অফিসে (বর্তমান জগন্নাথ হলের অংশ বিশেষ)
রাত্রিকালে ঢাকা শহর ছাত্রনেতাদের এক সভা আহ্বান করা হয়। আমি ঢাকা ইসলামিক ইন্টারমেডিয়েট
কলেজের (বর্তমান কাজী নজরুল ইসলাম কলেজ) ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঐ সভায়
যোগদান করি। শেখ মুজিবর রহমান ও ঢাকা কলেজের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে ঐ সভায় উপস্থিত
হন। ... ঐ সভাতেই তিনি পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পাকিস্তানি রাজনীতিবিদদের
বিমাতাসুলভ মনোভাবের উল্লেখ করেন এবং লিয়াকত আলী খানকে সম্বর্ধনা দানের বিরোধীতা করেন।
অবশ্য সে সভায় একথা তখন তেমন সমর্থন লাভ করেনি। সভা শেষ হয় রাত ১২টার পর। তখন শেখ সাহেব
ও আমি হেঁটে হেঁটে বাসায় ফিরি। উনি তখন আরমানিটোলার এক বাসায় থাকতেন। আমি থাকতাম আহসান
মঞ্জিল সংলগ্ন ছাত্রাবাসে। সারাটি পথ তিনি আমাকে পাকিস্তানিদের শোষণ ও পূর্ব পাকিস্তানের
বঞ্চনার কথা বলতে থাকেন এবং পাকিস্তান থেকে আমাদের পৃথক হয়ে যাওয়াই উচিত- এ কথা বলেন।
(সূত্র: ফজলুল কাদের চৌধুরী ও সমকালীন মুসলিম সমাজ, মোহাম্মদ হাসন, বইয়ের ভূমিকার লেখক
ড. মোহর আলী পৃ-১২)
উপরোক্ত তথ্য উপাত্ত অবলোকন করে যে
কোনো সাধারণ জ্ঞানের মানুষ ও বুঝতে পারবে যে, আধিপত্যবাদী ও বর্ণবাদী ভারতীয় নেতৃবৃন্দের
অখণ্ড ভারত গঠনের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করার জন্যই ভারত ১৯৪৭ সাল থেকেই তৎকালীন পূর্বপাকিস্তানের
কমিউনিস্ট পার্টিসমূহ, পাকিস্তান জাতীয় কংগ্রেস সদস্যবৃন্দ এবং মুসলিম লীগের ক্ষমতালোভী
নেতৃবৃন্দের মদদ দেয়া শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় নিয়মতান্ত্রিক ভাষা আন্দোলন বিপদগামী
হয়ে রক্তাক্ত পরিণতি লাভ করে। এই রক্তপাতের পর মুসলিম সংস্কৃতিকে বিপদগামী ও হিন্দু
সংস্কৃতির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্মৃতিস্তম্ভ, শহীদ মিনার ও হিন্দু সংস্কৃতির আদলে
ভাষা দিবস চালু করা হয়। যা পর্যায়ক্রমে মূর্তিপূজা, প্রতিকৃতি পূজা, মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বলনে
পর্যবসিত হয়। যে মুসলিম ঐক্য সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ও তাদের দোসর ব্রাহ্মণ্যবাদী
শক্তির শতসহস্র চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে উপমহাদেশে মুসলমানদেরকে পাকিস্তান নামক
একটি স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড দান করেছিল সে মুসলিম ঐক্যকে বিনষ্ট করার জন্য ৪৭ পরবর্তীতে
মিথ্যাচার ও ভাষা আন্দোলনকে ব্যবহার করে মুসলিম ছাত্রলীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ ও আওয়ামী
লীগ গঠন করা হয়। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম শক্তিকে দ্বিধাবিভক্ত করার জন্য যুক্তফ্রন্ট
গঠন করা হয়। পর্যায়ক্রমে অদূরদর্শী ও ক্ষমতালোভী শেখ মুজিবুর রহমানকে ব্যবহার করে ১৯৭১
সালে পাকিস্তানকে চূড়ান্তভাবে দুইভাগ করা হয় এবং পাকিস্তানি বাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর
ভারতীয় বাহিনীর নিকট আত্মসমর্থন করে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়- ১৯৭১ সালের পর থেকে মুসলিম
বিদ্বেষী ইহুদী-খ্রিস্টান চক্রের সাথে হাত মিলিয়ে ব্রাহ্মণ্যবাদী ভারত বর্তমান পাকিস্তানের
সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উ. পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে আলাদা করে পাকিস্তানকে ৪ টুকরা এবং
বাংলাদেশকে জুমল্যান্ড, বঙ্গভূমি ও বাংলাদেশ এরূপ তিন টুকরা করার কার্যক্রম অব্যাহত
রেখেছে।
বর্তমান পাকিস্তানে ভারতীয় এজেন্ডা
বাস্তবায়নে কাজ করছে ভারত সৃষ্ট পিপিপি, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দলসমূহ, টিটিপি,
মোহাজের কওমী পার্টি, বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট, ধর্ম ব্যবসায়ী ভণ্ডপীর-ফকির, কবর পূজারী,
মাজার পূজারী, পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। বর্তমান বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়ন
করছে ভারত সৃষ্ট আওয়ামী লীগ, সাম্রাজ্যবাদ সৃষ্ট বামপন্থী দল সমূহ, শান্তিবাহিনী, বঙ্গসেনা,
ধর্মব্যবসায়ী ভণ্ডপীর, ফকির, কবরপূজারী পীর পূজারী ও বেদআতীগণ। ১৯৪৭ পূর্বকালের ভারতের
এবং বর্তমান ভারতে মুসলমানরা হিন্দুদের যে সকল অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হয়েছিল এবং
হচ্ছে বর্তমান বাংলাদেশে ও ঈমানদার দেশ প্রেমিক মুসলমানরা ভারত সৃষ্ট আওয়ামী জোট কর্তৃক
একই প্রকার অত্যাচার- নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। হিন্দুস্থানের হিন্দুরা যেভাবে বিগত
২৫০ বছর যাবত মুসলমানদেরকে ধর্মপালনে বাধা দিয়েছে, ধর্ম ও নীতির কারণে জুলুম নিপীড়ন
করেছে বর্তমান বাংলাদেশে ও দেশপ্রেমিক ইসলামী শক্তিসমূহ একই রূপ অত্যাচার- নির্যাতনের
শিকার হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে প্রভুকে খুশি করার জন্য এরা প্রভুর চেয়ে আরো বেশি হিংস্রতার
আশ্রয় গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ভারত সৃষ্ট দল ও গোষ্ঠীসমূহ বর্তমানে সম্পূর্ণভাবে বর্ণহিন্দু
মানস ধারন করে মুসলিম ও ইসলাম বিদ্বেষের প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়েছে।
এতদসংক্রান্ত তথ্যাবলী উল্লেখের পূর্বে
কয়েকটি মৌলিক বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হচ্ছে। বিষয়গুলো হলো- অখণ্ড ভারত তত্ত্ব বা
The India Doctrin, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারণ এবং পাকিস্তান
ভাঙার কৌশলের ধারাবাহিকতা।
অখণ্ড ভারত তত্ত্ব বা The India Doctrine-
মনরো ও আইসেন হাওয়ার ডকট্রিনের আদলে
পরিকল্পনা করা হয়েছে India Doctrine। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু এর প্রণেতা,
পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ও আইকে গুজরাল একে আরো অগ্রবর্তী করেছেন। নেহেরু ডকট্রিনের
মূল কথা হলো- ১৯৪৭ পূর্ব British India নিয়ে হবে অখণ্ড ভারত। সেক্ষেত্রে পাকিস্তান, বাংলাদেশ
ও বার্মা অখণ্ড ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। পার্শ্ববর্তী নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান
ও মালদ্বীপ হবে ভারতীয় সামরিক ও রাজনৈতিক আধিপত্যের আওতাধীন। এ লক্ষ্যেই নেহেরুর নেতৃত্বাধীন
ভারত ১৯৪৭ থেকেই কার্যক্রম পরিচালনা করছে যা এখনো অব্যাহত আছে। এই আধিপত্যবাদের বলি
হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরে অবস্থিত দেশীয় রাজ্যসমূহ, পার্শ্ববর্তী সার্ক দেশ সমূহ, বার্মা
ও আফগানিস্তান। ইসলাম ও মুসলিম বিদ্বেষী ভারত পৃথিবীর অন্যান্য ইসলাম বিরোধী শক্তিসমূহ
যথা ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সাথে হাত মিলিয়ে তার অপকর্ম অব্যাহত রেখেছে। ভারতের
এই অপকর্ম পার্শ্ববর্তী দেশসমূহের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলকে
অস্থিতিশীল করে তুলেছে। এসব দেশের ভারত সৃষ্ট রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী ও সন্ত্রাসী
গোষ্ঠী প্রতিনিয়ত ভারতের স্বার্থে নিজ নিজ দেশে অশান্তি সৃষ্টি করছে। বাংলাদেশে আওয়ামী
লীগ নেতৃত্বাধীন জোট, এই জোটের বলয়ে অবস্থানকারী বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতি কর্মীরা প্রতিনিয়ত
নিজ দেশকে ভারতের পদতলে বলি দিয়ে ভারতের স্বপ্নপূরণে সহযোগিতা করছে এবং - ভারতীয় এজেন্ডা
বাস্তবায়নে কাজ করছে।
বেশির ভাগ লোকেরা মনে করে ১৯৪৭ সালে
ব্রিটিশ রাজশক্তি ভারত ২ টুকরা করে ভারত ত্যাগ করেছে। কিন্তু বাস্তব অবস্থা ছিল ভিন্ন।
নিম্নের তথ্যটি দেখলে বিষয়টি বোধগম্য হবে।
* ব্রিটিশ ভারতের প্রত্যক্ষ শাসনাধীন
অঞ্চলের বাইরে আরো ৭০০টি স্বাধীন রাজ্য ছিল ভারতবর্ষে। ব্রিটিশ রাজশক্তি ছলে-বলে কৌশলে
এ সকল রাজ্যের বেশির ভাগ দখলে নিতে সক্ষম হয়েছিল। এর পরেও ১৯৪৭ সালে আরো ২৮৩টি রাজ্য
অবশিষ্ট ছিল যাদেরকে করদ রাজ্য বা মিত্র রাজ্য বলা হত। এসব রাজ্যের হিন্দু-মুসলিম রাজা
ও নবাবগণ নিজ নিজ আইন অনুসারে রাজ্য শাসন করতেন। ইংরেজ সরকারকে এই রাজ্যগুলো কর দিত।
ইংরেজ সরকার ভারতবর্ষ ত্যাগ করার আগে দেশীয় রাজাদের ডেকে বলেছিলেন যে, 'তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে
ব্রিটিশ সরকারের অধীন, ভারত সরকারের সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ইংরেজ ভারত ত্যাগ
করার সঙ্গে সঙ্গে তারা স্বাধীন। তারা চাইলে স্বাধীন থাকতে পারে অথবা স্বেচ্ছায় ভারত
বা পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে পারে। ভারত ত্যাগের প্রাক্কালে ভাগ সমূহ ছিল নিম্নরূপ-
দেশীয় রাজ্য ২৮১টি
হিন্দুস্থান ১টি
পাকিস্তান ১টি
পর্তুগীজ শাসনকৃত ১টি
ফরাসী শাসনাধীন ১টি
মোট ২৮৫টি
সূত্র: সাপ্তাহিক দেশ, কংগ্রেস শতবর্ষ
সংখ্যা, (১৮৮৫-১৯৯৫) লেখক: শ্রী অতুল্য ঘোষ পৃ-১৩০।
কিন্তু ব্রিটিশ শাসকগোষ্ঠী ভারত ত্যাগ
করার পর ভারত অত্যাচার, আগ্রাসন, আন্তর্জাতিক নীতিভঙ্গ, প্রতারণা ও জবরদস্তির মাধ্যমে
উক্ত ২৮৩টি রাজ্য দখল করে নেয়।
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি
ও কারণ-
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি
হলো- মুসলমানরা অন্য কোনো জাতির অংশ নয়- বরং একটি স্বতন্ত্র জাতি। অন্য কোনো জাতির
সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানরা কোনো মিশ্র জাতীয়তাও নির্মাণ করতে পারে না। কেননা মুসলিম
জাতীয়ভাবোধের একমাত্র আদর্শ হলো তাদের দ্বীন বা ধর্ম। চলবে