দিল্লীর সেবাদাসী সরকার দীর্ঘ ১৬ বছরে
আমাদের প্রশাসন, সামরিক প্রতিষ্ঠান, আইন বিভাগ, বিচার বিভাগ, ও অন্যান্য বাহিনী, ব্যাংক
ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান. শিক্ষানীতি, শিক্ষাব্যবস্থা, সহ সকল সরকারি- আধাসরকারি, স্বায়ত্বশাসিত
ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহকে অধিপত্যবাদী ভারতের স্বার্থের অনুকূলে বিধ্বস্থ-বিপর্যস্থ
করেছে। তারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, মসজিদের ইমাম থেকে মাদ্রাসা বোর্ড
পর্যন্ত ভারতের অনুকুলে পূনর্বিন্যাস করেছে। সকল প্রতিষ্ঠানে ভারতীয় অধিপত্য প্রতিষ্ঠা
করেছে। কিন্তু আমাদের অকুতোভয় ছাত্র-যুব-জনতা শেষ মূহুর্তে সম্বিত ফিরে পেয়ে দিল্লীর
সেবাদাসীকে দিল্লীর নিকট ফেরত পাঠিয়ে দেশপ্রেমিক ও যোগ্য নাগরিকদের সরকার প্রতিষ্ঠা
করেছে। এমতাবস্থায় বর্তমান সরকারকে দেশ পূনর্গঠন ও জাতীয় পূনর্জাগরণে সফলতার সাথে
নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
পুনর্গঠন ও পূনর্জাগরণে বাধা দিবে
ভারত, ভারতের পালিত বিভিন্ন নামের সামাজিক, রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, বুদ্ধিজীবি
ও সরকারি- বেসরকারি কার্মকর্তা-কর্মচারীগন। যে রাজনৈতিক জোট ও নেতৃবৃন্দ ভারত ও পাশ্চাত্যের
ষড়যন্ত্রের অংশ হয়ে ১/১১ এর মাধ্যমে আমাদের প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ২০০৭
সালে ধ্বংস করেছিল তাদেরকে চিহ্নিত করে তাদের কার্যকলাপ শ্বেতপত্র আকারে প্রকাশ করলে
তারা জাতিকে আর বিভ্রান্ত করতে পারবেনা। এ কাজটি সম্পন্ন করার পর বর্তমান অন্তর্বর্তী
সরকার দেশ পূনর্গঠন ও পূনর্জাগরণে দ্রুত কার্যক্রম পরিচালনা কারতে পারবে।
পূনর্গঠন ও পূনর্জাগরণের ভিত্তি ও
রূপরেখা-
ভিত্তি- একটি ভূখন্ডের সংখ্যাগরিষ্ঠ
ধর্মীয় জনগোষ্ঠীই একটি দেশ গঠন করে। ভারতের হিন্দু জনগোষ্ঠী ১৯৪৭ সালে হিন্দুস্থান
গঠন করে এবং মুসলিম জনগোষ্ঠী পাকিস্তান গঠন করে। ভারতের চক্রান্তে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান
ভাগ হয়ে বাংলাদেশের জন্ম হলেও এদেশের মানুষ ভারতের অংশ হতে রাজী হয়নি। ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ
পাকিস্তানের অংশ না হলে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক আলাদা দেশ প্রতিষ্ঠালাভ করত না। তদ্রূপ
সমগ্র বিশ্বে যে সব দেশ গঠিত হয়েছে সেগুলির ভিত্তিও ছিল উক্ত ভূখণ্ডের অধিবাসীদের ধর্মীয়
ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং স্বাধীন থাকার ইচ্ছা। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি এবং
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আদর্শিক ভিত্তি ও কারন এক ও অভিন্ন। তা হল-
“মুসলমানরা অন্য কোন জাতির অংশ নয়-বরং
একটি স্বতন্ত্র জাতি। অন্যকোন জাতির সাথে মিলিত হয়ে মুসলমানরা কোন মিশ্র জাতীয়তা নির্মাণ
করতে পারেনা। কেননা মুসলিম জাতীয়তাবাদের একমাত্র আদর্শ হল তাদের দ্বীন বা ধর্ম। তারা
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের এই আকাংখা বাস্তবায়ন করবে-অন্য কোন পথে নয়। ১৯৪৭ সালের
পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য ছিল ভারতের বর্ণবাদী, মুসলিম বিদ্বেষী ও মূসলমানদের অস্তিত্ব
বিরোধী হিন্দুদের আধিপত্য থেকে মুক্ত হয়ে মুসলমান জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্র
কায়েম করা, যে রাষ্ট্রে তারা নিজেদের ঐতিহ্য এবং আদর্শের আলোকে জাতীয় জীবন ব্যাবস্থা
পূনর্গঠিত করতে পারে। যে রাষ্ট্রে তারা সাংস্কৃতিক নিষ্পেষণ, অর্থনৈতিক শোষন বা অনৈসলামিক
ধর্মীয় অনুশাসনের ভয়ে শংকিত হবেনা। যে রাষ্ট্রের অর্থনীতি রাজনীতি, পররাষ্ট্রনীতি
বা সংস্কৃতি কিরূপ হবে তা নির্ভর করবে মুসলিম জাতির মৌলিক আদর্শগুলিকে আমরা কিভাবে
বিশ্লেষণ করব তার ভিত্তিতে, আমাদের আবাসভূমির উপর আমাদের সার্বভৌমত্ব রক্ষিত হলে রাষ্ট্র
পরিচালনার স্বাধীনতা আমাদের থাকবে।
পূনর্গঠনের রূপরেখা
রাজনীতির পূনর্গঠন
১৯৪৭ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই
ভূখণ্ডের রাজনৈতিক দলসমূহের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে এই দেশের বাজনীতির ধারা
দুইটি। প্রথম ধারাটি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব, আমিত্ব ও মর্যাদায় বিশ্বাসী- অপর
ধারাটি আধিপত্যবাদী ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশকে ভারতের অংশ হিসাবে দেখতে
বিশ্বাসী। ৫ই আগষ্ট ২০২৪ সালে আমরা প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এই স্বাধীনতাকে সুরক্ষিত
করতে আমাদের করণীক নিম্নরূপ-
১। আধিপত্যবাদী ভারত সৃষ্ট ও আশীর্বাদপৃষ্ঠ
রাজনৈতিক দলসমূহ নিষিদ্ধ করতে হবে। তাদের ফৌজদারী অপরাধসমূহের জন্য তাদেরকে আইনানুগ
শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
২। ইসলামী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও
বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সমৃদ্ধি ও মর্যাদায় বিশ্বাসী দলসমূহের নেতৃস্থানীয়
পর্যায়ে অনেক ভারতীয় এজেন্ট কার্যকর রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের নিকট এসব
নেতৃবৃন্দের তালিকা রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী এসব রাজনীতিককে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করতে
হবে।
৩। ১৯৫৭ পূর্ব পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা
চালু যারা-
স্যার সৈয়দ আমীর আলীই সর্বপ্রথম ভারতের
নির্যাতীত মুসলমানদের স্বার্থরক্ষায়, মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার দাবী
তোলেন পরবর্তীতে মুসলিম লীগের দাবীর মুখে ব্রিটিশ সরকার এই দাবী মেনে নেয়। বিষয়টি
ছিল এরূপ- জনসংখ্যার হার অনুযায়ী হিন্দু মুসলিম ও তফশীলি হিন্দুদের জন্য সংসদীয় আসন
বরাদ্দ থাকবে। প্রত্যেক সম্প্রদায় নিজেদের ভোটে নিজেদের নেতা নির্বাচন করবে। এতে সাম্প্রদায়িক
বঞ্চনার অবসান ঘটবে। মুলতঃ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের কবল থেকে মুসলমানদের অধিকার আদায়ে
ইহা ছিল উত্তম ব্যবস্থা, এখনও বিষয়টি প্রাসঙ্গিক। কেননা বর্তমান যুক্ত নির্বাচন প্রথায়
হিন্দুরা এমন মুসলমানকে ভোট দেয় যারা নামে মুসলমান হলেও কার্যতঃ ভারতের স্বার্থরক্ষাকারী।
১৯৫৭ সাল পর্যন্ত এই নিয়ম চালু ছিল। ভারতসৃষ্ট দল আওয়ামী লীগ, ভারত লালিত বামদলসমূহ
ও ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের পাকিস্তান শাখার সদস্যগণের সন্মিলিত চাপে ১৯৫৭ সালে যুক্তফ্রন্ট
সরকার পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা বাতিল করে যুক্ত নির্বাচন প্রথা চালু করে। এতে পাকিস্তানের
ও বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ ব্যাপকতা পায়। পুনরায় পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা
চালু করলে এদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ অনেকাংশে কমে যায়।
৪। রাজনৈতিক দল বহাল থাকার ও গঠন করার
একটি মানদণ্ড নির্ধারন করতে হবে। জাতীয় মূল্যবোধ ও আদর্শে বিশ্বাসী সৎ, দক্ষ, যোগ্য
ও দেশপ্রেমিক নাগরিকবৃন্দই থানা পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী
হতে পারবে। ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ, পাচারকারী, দখলদার, মাদক কারবারি ও প্রমানিত অপরাধীরা
রাজনীতির জন্য অনুপযুক্ত বিবেচিত হবে।
প্রশাসনিক পূনর্গঠন-
ডাকাত, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারী, দেহব্যবসা
ও সন্ত্রাসের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।
৫ই আগষ্ঠের ছাত্র-যুব-জনতার বিপ্লবের প্রাক্কালে সমাজ, দেশ ও শিক্ষাঙ্গনের শত্রু এসব
অপরাধীরা পালিয়ে গেছে। অতপর সৎ, দক্ষতা, মেধাবী ও ধার্মিক একজন ভিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের
ভিসি নিয়োগ করা হয়েছে এ নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যেভাবে
পছন্দ করা হয়েছে ঠিক তদ্রুপ প্রশাসন পুনর্গঠনে অনুরূপ একজন সিনিয়র সচিবের নেতৃত্বে
একটি কমিটি করা প্রয়োজন। উক্ত কমিটির প্রধান দায়িত্ব হবে প্রশাসনকে স্বাধীন দেশের
উপযোগী করে সাজানো এবং জনবান্ধব করা। এ লক্ষ্যে প্রধান প্রধান করণীয় হল-
১। ২০০৯ থেকে ৫ই আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত
নিয়োগপ্রাপ্তদের জাতীয়তা ও যোগ্যতা যাচাই করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন।
২। বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
মধ্যে যারা ভারতের সেবাদাসীকে সহায়তা করতে গিয়ে আইন ভঙ্গ করেছে তাদেরকে চাকরিচ্যুত
করা।
৩। যোগ্য ব্যক্তিদেরকে যথাযথ স্থানে
পদায়ন।
৪। পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের
সততা- যোগ্যতা-দেশপ্রেম যাচাই করে প্রমোশন প্রদান।
৫। ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার
করে চাকরিরতদের বরখাস্থ করা। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম, এ,
জি ওসমানী স্বাক্ষরিত “মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র” নামক গ্রন্থকে ভিত্তি করে একাজ করতে
হবে। সে দলিলে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ছিল সর্বমোট ৮০ (আশি) হাজার। সেবাদাসী সরকার ২০০৯
সালেই উক্ত গ্রন্থ নিষিদ্ধ করে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সৃষ্টি করেছে। মুজিব বাহিনী, কাদেরিয়া
বাহিনী, আওরঙ্গ বাহিনীসহ আরও যেসব বাহিনী ১৯৭১ সালে সৃষ্টি করা হয়েছিল সেগুলি ছিল ভারতীয়
স্বার্থরক্ষা বাহিনী। এসব বাহিনীর কাউকে মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করা ঠিক হবেনা।
৬। ২০০৯ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত
যেসব কর্মকর্তাকে বিনা অপরাধে ওএসডি করা হয়েছে, চাকারিচ্যুত করা হয়েছে তাদেরকে পদোন্নতি
দিয়ে চাকরিতে পূনর্বাসন করলে প্রশাসনের মেধা ও দক্ষতার ঘাটতি দূর হবে।
আইনশৃংখলা বাহিনী পূনর্গঠন
চলবে
লেখক সম্পাদক ও প্রকাশক
মাসিক ইতিহাস-অন্বেষা