Dalits In 'Hindu Rashtra' ‘হিন্দু রাষ্ট্রে’ দলিতাদের অবস্থান

০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

২০০১ সালে ভূমিকম্প আক্রান্ত গুজরাটে ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচির বাস্তবায়নচিত্র তুলে ধরে সংখ্যালঘুদের বিপরীতে শেকড় গেড়ে থাকা ভয়াবহ বৈষম্যের চিহ্ন, যার নির্মমতা নাড়া দেয় পুরো বিশ্বকে। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এই ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচি থেকে ভুক্তভোগী মুসলিম ধর্মাবলী ও দলিত সম্প্রদায়কে বর্জনের চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রতীয়মান হয়।

 

২০০২ সালে সংঘ পরিবার সংগঠনগুলোর নির্দেশে, মোদী সরকারের সহায়তায় ও মদদে সংঘটিত মুসলিম গণহত্যাটি ছিল আরেকটি উপলক্ষ, যাকে কেন্দ্র করে দলিতদের কষ্ট ও দুর্দশাগুলো পুনরায় বিস্তারিত তদন্তের আওতায় আসে। হিন্দু এজেন্ডায় দলিতদের সহযোগীতা এবং পরবর্তীতে তাদের পদাতিক সৈনিক হিসেবে ভূমিকা পালনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে, বর্ণপ্রথার আধিপত্যদুষ্ট গণমাধ্যম তখন বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের জোরদার প্রচারের প্রয়োজনীয়তাবোধ করেনি। গুজরাট গণহত্যার ন্যাক্কারজনক ঘটনায় দলিত সম্প্রদায়ের রক্তও মিশে আছে। দলিতদের ১০৮ জন প্রাণ হারান, যার মাঝে শুধু ৩৮ জনেরই প্রাণ ঝরে যায় আহমেদাবাদে। মূলত, অসহায় মুসলমানদের পাশে থেকে হিন্দুত্ববাদী দুর্বৃত্তদের প্রতিহত করতে গিয়ে দলিত সম্প্রদায়ের লোকজন শহীদ হন।

মজার ব্যাপার হল, বাবাসাহেব ডক্টর ভিম রাও আম্বেদকর তার অনুসারীদের হিন্দুরাজ বাস্তবায়ন থেকে যেকোন মূল্যে বিরত থাকতে আহ্বান জানিয়েছিলেন।

 

দুই বছর বয়সী শিশুর মরদেহ উত্তোলন

২০০১ সালে নরেশ সোলাঙ্কির আড়াই বছরের ভাতিজা প্রাণ হারালে, বানাসকাঁথা জেলার পালানপুর ব্লকের হুদা গ্রামের শোকগ্রস্ত পরিবার তাকে সামাজিক কবরস্থানে দাফন করে। দাফনের পর বাড়ি ফিরতেই তারা খবর পায়, প্যাটেল সম্প্রদায়ের একজন ট্রাক্টর দিয়ে মরদেহটি উত্তোলন করেছে। দখলকৃত জমির কাছেই নিম্নবর্ণের শিশুটির সমাধি ক্ষমতাশালী প্যাটেল সম্প্রদায়ের বিরক্তির উদ্রেক ঘটায় বলে তারা এমন নির্মম আচরণ করে।

 

এই ঘটনার সাত বছর পরেও হুদা গ্রামের দলিতরা এখনো কালেক্টর এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকে দাফনের জন্য বরাদ্দকৃত জমির অপেক্ষায় আছে, যে অপেক্ষার ব্যর্থতা বাদে কোন পরিণতি নেই। গতবছরই দলিত সম্প্রদায়ের এক প্রবীণ পরলোক গমন করলে তার নিজ সম্প্রদায়কে মরদেহ অন্য গ্রামে নিয়ে যেতে হয়, যেখানে ভাগ্যক্রমে দলিতদের জন্য একটি পৃথক কবরস্থান ছিল।

 

দাফনের জন্য জমি না থাকার সমস্যা যে কেবল হুদা গ্রামে তা নয়, বরঞ্চ পুরো রাজ্য জুড়েই বিদ্যমান- এ ব্যাপারে কোন রকম সন্দেহের অবকাশ নেই। ফেব্রুয়ারী, ২০০৯ এর প্রথম সপ্তাহে ‘দ্য মেইল টুডে’ এর একটি প্রতিবেদনে এটি স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়। যে- একে দলিতদের সাধারণ সমাধিক্ষেত্র ব্যবহারের অধিকার তো নেই, তার উপর তাদের গ্রামের নিকটবর্তী জলাভূমিতে সমাধি করতে বাধ্য করা হয়। কোন রকম আইনি অধিকারের অনুপস্থিতিতে উচুবর্ণীয় আধিপত্য এরূপ তোড়িত করতে বাধ্য করে।

 

গুজরাট রাজ্য গ্রামপঞ্চায়েত সামাজিক ন্যায় সমিতি মঞ্চ দ্বারা পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ‘গুজরাটের ৬৫৭টি গ্রামের মধ্যে ৩৯৭টি গ্রামে দলিতদের কবর দেওয়ার জন্য কোনও নির্দিষ্ট জমি বরাদ্দ নেই। ২৬০টি গ্রামের মধ্যে যেখানে আনুষ্ঠানিকভাবে জমি বরাদ্দ করা হয়েছে তার ৯৪ টি প্রভাবশালী বর্ণের দখলে দেখেছে এবং ২৬টি গ্রামে এটি নিম্নভূমির এলাকা যার ফলে জমি জলাবদ্ধ হয়ে পড়ে।

 

এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, যখন মৃতদের দাফন করার প্রশ্ন আসে, তখন দলিতরা মসলিমদের সাথে একটি অনুরূপ সমস্যা ভাগ করে নেয়। মুসলিমরাও একই ধরনের দুর্দশা ভাগ করে নেয় যখন তারা দেখতে পায় তাদের কবরস্থান গুলো প্রভাবশালী শ্রেণী দ্বারা দখল হয়ে যাচ্ছে। কয়েক বছর আগে গুজরাট হাইকোর্টকে হস্তক্ষেপ করতে হযেছিল এবং রাজ্য সরকারকে পুলিশ কর্মী পাঠাতে বলেছিল পাঠানে মুসলিমদের সমাধি/কবরস্থান দখলের চেষ্টা চলছিল।

 

জাত পরিচয়ে গৃহহীন

‘হিন্দু রাষ্ট্র’ যেখানে মৃতদের জন্য একটুকরো জমির সন্মান নেই, সেখানে জীবিতদের সামাজিক অবস্থান খুব সহজে অনুমান করা যায়। আহমেদাবাদে- নির্মিতব্য এই “হিন্দু রাষ্ট্রে” একজন দলিত হিসেবে বাসস্থান খুঁজে বের করা এইক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত হতে পারে।

সাধারণত কোন দলিত উচ্চবর্ণের কোন নির্মাতার শরণাপন্ন হলে তাকে সরাসরি নিরুতসাহিত। করা হয় বা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করা হয়। এক্ষেত্রে দলিত আর্থিকভাবে সচ্ছল হলেও তা আসলে তুচ্ছ হিসেবে গণ্য করা হয়। নির্মাতা এবং রিয়েল এস্টেট এজেন্টদের জন্য, অন্তত একটি দলিত পরিবারের সাথে যেকোন প্রকার লেনদেন ব্যবস্যার সামাজিক মর্যাদাকে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত করে।

আহমেদাবাদে বর্তমানে “৩০০টি শুধুমাত্র দলিত পরিবার নিয়ে গড়ে ওঠা সমাজজাতীয় অদ্ভুত এক প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়, যা পরিচয় দেয় ২০০২ সালের গণহত্যার পর নতুনভাবে উজ্জীবিত হওয়া গোড়া বর্ণবাদের। এক্সপ্রেস রির্পোটের এক গবেষণায় এক প্রতিবেদক জোর দিয়ে জানান, এটি ঐচ্ছিক নয়, বরঞ্চ চাপিয়ে দেয়া সামাজিক অবস্থানের ফলাফল। “A Dalit? Go find a Dalit society,” ডি পি ভট্টাচার্য, আহমেদবাদ, ১৭ ই জুন ২০০৭)

 

অবসর প্রাপ্ত আই এ এস অফিসার সি কে ভালেরা, যিনি রামদেবনগরের উল্লেখযোগ্য একটি দলিত সমাজে বসবাস করেন, ব্যক্ত করেন যে, “এমনকি একজন দলিত উচ্চবর্ণ অধ্যুষিত এলাকায় একটি ফ্ল্যাটের খরচ বহনে সক্ষম হলেও নির্মাতা বা বিক্রেতাদের কাছে সে প্রত্যাখ্যাত হয়।কিছু সমাজ বিজ্ঞানীর মতে, দলিতদের সমাজ থেকে এরূপ বিচ্ছিন্নকরণ ১৯৮২ সালের দিকে শুরু হয়, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আরো গুরুতর হয়ে উঠেছে। এই প্রবণতা শুধু প্রাচীর বেষ্টিত শহর ছাড়াও পশ্চিম আহমেদাবাদের স্যাটেলাইট, বস্ত্রপুর, বোদাকদেব, আম্বাবাদীর মত অভিজাত এলাকা গুলোতেও লক্ষ্য করা যায়। সমাজ বিজ্ঞানী অচ্যুত ইয়াগনিক বলেছেন, “শহরে ৩০০টির ও বেশি দলিত সমাজ রয়েছে, যার মাঝে কেবল চাঁদখেদাতেই ২০০টি সমিতি আছে। এগুলোর বেশিরভাগই ২০০২ সালে দাঙ্গার পর গোমতীপুর, বাপুনগর এবং দামি দানি লিমদা থেকে উঠে আসা জনগণ নিয়ে গড়ে উঠেছে। আপনি নির্মাণ ঠিকাদারদের খুঁজে পাবেন যারা শুধু দলিত সমাজ গড়ে তোলে।”

অবশ্যই এটির অধীনে হিন্দু ঐক্যের মহান ছত্রছাযায় দলিতদের পৃথকীকরণের কাছাকাছি বিচ্ছিন্নতা, নির্বাচন এবং দাঙ্গার সময় দলিতদের তাদের সাম্প্রদায়িক এজেন্ডার জন্য ব্যবহার করতে সঙ্ঘ পরিবার থামায় না। এমনকি দাঙ্গায় নিহত ও আহতদের তালিকার দিকে এক ঝলক দেখলেও এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র মুসলিম ও দলিতদের নাম পাওয়া যায়, অন্য বর্ণের সংখ্যা নামেমাত্র।

মজার বিষয় হল, রাজ্যের বাইরের একজন দলিত, যার জাত উপাধি মূলধারার অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতে সনাক্তযোগ্য নয়, তারা সহজেই এটিতে প্রবেশ করতে পারে।

 

শিক্ষক নিয়োগকালে উপেক্ষার মহোৎসব

গুজরাটের মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের ওয়েবসাইট অনুসারে গুজরাটে অনুদান প্রাপ্তের বাহিরে স্কুলের সংখ্যা প্রায় ৩২৫৫ এর কাছাকাছি। সূক্ষ্মাভাবে পর্যবেক্ষণে দৃশ্যমান হয় যে, বেশ কিছু সাদৃশ্য ছাড়াও স্কুলগুলোর মাঝে প্রধান মিল পাওয়া যায় একযোগে শিক্ষা আইন ১৯৭২ এর বিধিসমূহে লঙ্ঘনে। অথচ এই শিক্ষা আইনের বিধানগুলো পালন করা প্রতিটি স্কুলের জন্য আবশ্যক। যার পরিণতিতে বঞ্চিত সম্প্রদায় সমূহ থেকে কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজন শিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

শিক্ষা আইন ১৯৭২ এর বিধি অনুযায়ী সমস্ত অনুদান প্রাপ্ত এবং অনুদানের আওতামুক্ত স্কুল গুলোর জন্য নিয়োগের সময় সংরক্ষণ নীতি মেনে চলা বাধ্যতামূলক। এবং বিধিতে বলা হয়েছে যে, যদি কোন স্কুল তার বিধান লঙ্ঘন করে তবে তার নিবন্ধন বাতিল করা যেতে পারে। সাধারণত দেখা যায় যে, অনুদানহীন স্কুলগুলি প্রকাশ্যে নিয়ম লঙ্ঘন করে। মজার বিষয় হল, রাজ্য সরকারও প্রকাশ্যে স্বীকার করেন যে আওতামুক্ত স্কুলগুলি অনুদানের হওয়ায় তারা নিয়োগের নীতিসমূহ প্রনয়ণে অপারগ।

 

গত বছরই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস (ভাদোদরা, মে ২৬, ২০০৮) এই চলমান কেলেঙ্কারি সম্পর্কে একটি বড় প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যেখানে ফাঁস হয় যে, স্কুল শিক্ষক নিয়োগের নিয়ম লঙ্ঘন করার কারণে সরকারের জাতীয় লঙ্ঘনের প্রতি চরম ঔদাসিন্যের বিস্তারিত চিত্র। সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন বিভাগের মতে, যা বাস্তবায়নের তদারকি করার না অন্যতম সুস্পষ্ট কারণ হল একটি রোস্টার সংরক্ষণ আইনের অনুপস্থিতি।

 

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, কেন রাষ্ট্র এখনও এধরনের অপকর্ম বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি?

* প্রকৃতপক্ষে, গুজরাটের একজন নেতৃস্থানীয় সমাজকর্মীর দ্বারা দায়ের করা একটি আরটিআই আবেদন রিজার্ভেশন নীতির অধীনে অনুদানহীন স্কুলগুলি দ্বারা নিয়োগ করা শিক্ষকদের সংখ্যা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, এই বিবরণটি উন্মোচিত করে। দুরাবস্থা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সমাজকর্মী দু’টি- জিনিস দাবি করেছিলেন: অন্যায়ভাবে আইন লঙ্ঘনকারী স্কুলের রেজিস্টেশন বাতিল করা এবং অন্যায় সম্পৃক্ত অফিসারদের শাস্তি দেওয়া।

 

নৃশংসভাবে নৃশংসতা পরিচালনা

গুজরাটে SC/ST - এর বিরুদ্ধে নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনের অধীনে মামলার দোষী সাব্যস্ত হওয়ার হার কত? মাত্র ২৫ শতাংশ যেখানে খালাসের হার ৯৭.৫ শতাংশ। রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং আইনি বিভাগগুলিতে রাজ্যের সামাজিক বিচার বিভাগ দ্বারা জমা দেওয়া একটি ২৩ পৃষ্ঠার গোপনীয় প্রতিবেদন SC/ST-এর বিরুদ্ধে নৃশংসতা প্রতিরোধ আইনের অধীনে নথিভুক্ত করা মামলাগুলির অনুচিত উপায়ে পরিচালনার ন্যাক্কারজনক উদাহরণ প্রদান করে। এেক্সপ্রেস, সেপ্টেম্বর ১৫, ২০০৬) প্রতিবেদনে বলা হয়, কিভাবে প্রতিবেদনে দলিতদের মামলাগুলি পুলিশ সঠিকভাবে মামলাগুলি তদন্ত করেন এবং বিচারকার্যের সময় সরকারী আইনজীবীদের দ্বারা ন্যায়ের প্রতিকূল ভূমিকা পালন করা হয়:

 

আইনটি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে যে, এই আইনের অধীনে নথিভুক্ত অপরাধগুলি ডেপুটি এসপি পদের নীচের কোনও অফিসার দ্বারা তদন্ত করা যাবেনা অথচ ৪০০০ টিরও বেশি মামলা পুলিশ পরিদর্শক বা ইন্সপেক্টর দ্বারা পুলিশ তদন্ত করা হয়েছে।

অপরাধীকে খালাস দেয়া হয় কারণ ভুক্তভোগীকে SC বা ST সম্প্রদায়ের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত করা হয়নি। মামলার কাগজপত্রের সঙ্গে ভুক্তভোগীর জাতপাতের শংসাপত্র সংযুক্ত করা হয় না।

 

পাবলিক প্রসিকিউটররা আদালতের সামনে মিথ্যা দাবি করেছেন যে, আইনটি রাজ্য সরকার সংশোধন করেছে, যদিও এটি স্পষ্টভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় যে, এটি কেন্দ্রিয় সরকার দ্বারা প্রণীত হয়েছিল।

আগাম জামিন মঞ্জুর করা যদিও আইনে এমন কোন বিধান নেই। মজার বিষয় হল, SC 3 ST বিষয়ক সংসদীয় কমিটিও গুজরাট রাজ্যে নৃশংসতার মামলায়, এই ধরনের আগাম জামিনের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল।

প্রকৃতপক্ষে, ৪০০টি রায়ের একটি বিস্তারিত এবং পদ্ধতিগত অধ্যয়ন সোশ্যাল জাস্টিস কাউন্সিলের সেক্রেটারি ভাজিভাই প্যাটেল ২৩ পৃষ্ঠার এই রিপোর্টে অংশ নিতে সরকার কে বাধ্য করেছেন। এই প্রতিবেদনটি আমাদের বলে যে উচ্চ ও নিম্ন উভয় স্তরে সম্পূর্ণভাবে অবহেলিত পুলিশ তদন্ত এবং পাবলিক প্রসিকিউটরদের দ্বারা পরিচালিত একটি সুস্পষ্টভাবে প্রতিকূল ভূমিকা নৃশংসতা আইনের অধীনে দায়ের করা মামলাগুলির পতনের মূল কারণ। এটি লক্ষণীয় যে, তিনি ১ লা এপ্রিল, ১৯৯৫ সাল থেকে রাজ্যের ১৬টি জেলায় স্থাপিত বিশেষ নৃশংসতা আদালতে এই আইনের অধীনে প্রদত্ত এই রায়গুলি সাবধানতার সাথে নথিভুক্ত করেছেন। অধ্যয়নটি প্রচলিত সাধারণ ধারণাটিকেও বিস্ফোরিত করে যে, এই আইনের অকার্যকারিতা মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা বা পক্ষগুলির মধ্যে আপস করার কারণে, বাস্তবে এটি একটি জটিল রাষ্ট্র যা আইনটিকে দাঁতহীন করে তুলেছে।

সম্ভবত পুরো অবস্থাটি পরিস্থিতির ধারাবাহিকতা ছিল কারণ, এটি সেখানে বিদ্যমান ছিল।

 

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরো কয়েক বছর আগে একটি পর্যবেক্ষণ করেছিল, তা নজরে পড়েনি। গুজরাটে দলিতদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ইউপির পর্বে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম এবং বিহার (এশিয়ান এজ, ১১ই এপ্রিল ২০০৩)। এর আগের রেকর্ডটিও ‘ভাইব্রেন্ট গুজরাট-এর একটি বিরক্তিকর ছবি প্রকাশ করেছে। ১৯৯৮ সালের রিপোর্ট অনুসারে, দেশে দলিতদের উপর মোট নৃশংসতার সংখ্যা ছিল ২৫, ৬৯৭। এর মধ্যে শুধু গুজরাটেই ৮৮৯৪টি মামলা নথিভুক্ত হয়েছে। সে বছর দলিত নারীদের ধর্ষণের ২৮টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা দেশের মধ্যে সপ্তম সর্বোচ্চ।

কিন্তু, যখন SC এবং ST দের বিরুদ্ধে অপরাধ দমনে পদক্ষেপ নেয়ার কথা আসে, তখন বিজেপি সরকার কিছুই করেনি। SC এবং ST (অত্যাচার প্রতিরোধ)।

আইন ১৯৮৯ এর অধীনে সমস্ত জেলায় যে বিশেষ দলিত আদালতের কথা বলা হয়েছিল তা এখনও বাস্তব রূপ পায়নি। গুজরাটের ২৬টি জেলার মধ্যে, শুধুমাত্র ১০টি বিশেষ আদালতের ব্যবস্থা করা হয়েছে যদিও এই ১০টি আদালতের কোনটিই দলিত ইস্যুতে বিশেষ মর্যাদা দেয় না, দলিত কর্মীদের মতে। (একই রেফারেন্স)

 

আম্বেদকরের পূর্বাভাস

ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক ভারতে প্রথম ‘হিন্দু- রাষ্ট্র’- গুজরাটে বিদ্যমান থাকায় দলিতদের এমন পরিস্থিতি সম্পর্কে পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা যায়। অবশ্যই এখানে আমাদের লক্ষ্য এই থিমের উপর একটা ডেটা ব্যাঙ্ক উপস্থাপন করা নয়, আমাদের প্রধান উদ্বেগ দু’টি পয়েন্ট উৎত্থাপন করা।

সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী আন্দোলনে দলিতদের মর্যাদা কেন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে ওঠেনি?

কেন দলিতদের একটি অংশ এখন ও হিন্দুত্বের প্রতি অনুরাগ বোধ করে। এটি কি হিন্দু ধর্মের মধ্যে তার ঊর্ধ্বমুখী গতিশীলতার চিহ্ন হতে পারে বা এটি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি যে বিদ্বেষ জন্মেছিল এবং নিজে থেকেই হিন্দুত্ব এজেন্ডা চালানোর জন্য প্রস্তুত ছিল তার চিহ্ন।

এখানে জোর দেওয়া দরকার যে, সমগ্র গুজরাট জুড়ে একজনের দ্বারা বিশিষ্ট স্থানে হাজার হাজার বোর্ড লাগানো আছে।

সঙ্ঘ পরিবারের সহযোগীরা যে ‘আপনি হিন্দু রাষ্ট্রের এই বা ওই এলাকায় প্রবেশ করেছেন যা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং সমাজের বাকি অংশ থেকে ‘বিচ্ছিন্নতার’ প্রকাশ্য ঘোষণা।

এই মুহূর্তে একজন আম্বেদকরের পূর্বাভাস এবং হিন্দু রাজ্য সম্পর্কে চিন্তা করেন। ভারত ভাগের আগে লেখা তাঁর ‘পাকিস্তান বা ভারত বিভাজন’ বইতে তিনি স্পষ্টভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন: “যদি হিন্দু রাজ বাস্তবে পরিণত হয় তবে তা হবে এই দেশের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ। হিন্দুরা যাই বলুক না কেন, আসলে তাতে কোনো পার্থক্য নেই। হিন্দুধর্ম স্বাধীনতা, সাম্য এবং ভ্রাতৃত্বের জন্য একটি বিপদ তাই আমাদের উচিত হিন্দু রাজকে বাস্তবে পরিণত করার বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা।” (পাকিস্তান বা ভারত বিভাজন, পৃষ্ঠা ৩৫৮)।